বাঘ মহারাজ ও বাঁদরের গল্প | মানস রায়
দুপুর দুপর আহার সেরে বাঘ মহারাজ নিদ্রা গেছেন সুখে, এমন সময় হঠাৎ একটি বাঁদর কাঁদতে কাঁদতে সটান হাজির হলেন মহারাজের দরবারে। শান্তিপ্রিয় সেই বাঘ মহারাজ কে সে জঙ্গলে মান্য করে সবাই, সব্বাই তার কথা শোনে নির্দ্বিধায়। বেশ গম্ভীর ভাবে বাঘ মহারাজ বাঁদর টিকে জিজ্ঞেস করলেন, ঠিক কি উদ্যেশ্যে এই ভর দুপুরে বিরক্ত করতে তার এখানে আসা। কিছুটা ভয় পেয়ে যায় বাঁদর, তারপর কাপা কাপা স্বরে বলতে থাকে "মহারাজ, আজ সকালে ছানা তিনটিকে রেখে খাবারের সন্ধানে একটু বেরিয়েছিলাম, এসে দেখি দুটি ছানা বেমালুম উধাও, অনেক ক্ষণ হন্যে হয়ে খোঁজাখুজির পর, দেখতে পেলাম পাশের জঙ্গলের শয়তান বাঘা কচ মচ করে আমার ছানা দুটিকে চেবাচ্ছে "। রাগে গর্জে উঠলেন বাঘ মহারাজ, শয়তান বাঘা এই জঙ্গলে তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী , আজকাল জঙ্গলে তার অত্যাচার দিন কে দিন বেড়েই চলছে, নিরীহ পশু পাখি, বাঁদর সমেত কেউই রেহাই পাচ্ছে না বাঘার হাত থেকে। দিন কয়েক আগেই বাঘ মহারাজ ও শয়তান বাঘার মধ্যে একরকম বোঝা পড়া সম্পূর্ণ হয়েছে, কেউ কারো এলাকা ছেড়ে কখনোই বেরোবে না, যে যার নিজের এলাকায় শিকার করবে, তো বাঘার সাহস কিকরে হয়, কথার খেলাপ করে, আমার এলাকায় ঢুকে, আমার জন্তুদেরই হত্যা করে সে। মহারাজ গর্জাতে থাকলেন । মনে মনে ফন্দি আঁটলেন এবারে উপযুক্ত শাস্তি দেবেন বাঘা কে। কিভাবে জব্দ করা যায় তাকে এই ভাবতে ভাবতে হঠাৎ একদিন বাঘ মহারাজের মাথায় খেলে গেল এক অদ্ভুত বুদ্ধি । দূত মারফত শয়তান বাঘার কাছে বার্তা পাঠালেন মহারাজ, তাকে ভুঁড়িভোজের আমন্ত্রণ জানালেন। খানা পিনায় ওস্তাদ লোভী বাঘা শত্রুতা ভুলে মহারাজের আমন্ত্রণ গ্রহণ করলেন এবং নির্দিষ্ট দিনে হাজির হলেন মহারাজের দরবারে। হরেক রকম রান্নার পসরা সাজিয়ে মহারাজ আগাম প্রস্তুত ছিলেন। পছন্দের সব খাবারের পদ দেখতে পেয়ে শয়তান বাঘা এক নিমেষেই প্রায় সব কিছু সাবাড় করে দিলেন। হাপুস হুপুস করে চেটে পুটে বাঘা কে খেতে দেখে পাশ থেকে মনে মনে খিল খিলিয়ে হেসে উঠলেন বাঘ মহারাজ।
পূর্ব পরিকল্পনা মতন সেই খাবারে মহারাজ, আগাম মিশিয়ে দিয়েছিলেন স্মৃতি শক্তি ও কর্ম ক্ষমতা লোপ করে দেওয়ার কয়েক টি ঔষুধের গুলি। আহার গ্রহণের পর শয়তান বাঘা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয় মহারাজের দরবারে। ব্যাস, ঘুম ভাঙার পর অতীতের যাবতীয় সব স্মৃতি লোপ পেয়ে যায় তার ও কর্ম ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলে সে একনিমেষে । এরপর, শেষ মেস
বাঘা তার বাকি জীবনটা বাঘ মহারাজের অনুগত গোলাম হয়েই সে জঙ্গলে কাটিয়ে দেয় । শান্তি ফিরে আসে জঙ্গলে, পশু, পাখি, বাঁদর, হরিণ সমেত সমস্ত জন্তুরা ঠিক আগের মতই সুখ শান্তি ও হাসি খুশিতে দিন কাটাতে থাকলো সেখানে। শয়তান বাঘার শয়তানির ভয় আর রইল না সে জঙ্গলের নিরীহ পশু পাখিদের।
শিক্ষা :- লোভ ও হিংসা মানুষ কে করুন পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়