বিজ্ঞাপন

বুক রিভিউ- মায়াবনের রাজকন্যা

 


🐌🐌

❝মায়াবনের রাজকন্যা❞


বইয়ের নামঃ “মায়াবনের রাজকন্যা”


লেখকঃ ইউনুস আহমেদ 


প্রকাশকঃ লিখিয়ে প্রকাশনী 


প্রকাশকালঃ ২০২২ খ্রীস্টাব্দ


ধরনঃ শিশুতোষ রুপকথার গল্প 


প্রচ্ছদঃ  নিসা মেহজাবিন


অলংকরণঃ প্রীতিলতা চক্রবর্তী 


মূল্যঃ১৮০/-


বই আলোচনাঃ জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক ও কল্পবিজ্ঞান লেখক ইউনুস আহমেদ  এর “লিখিয়ে পান্ডুলিপি পুরস্কার-২০২২” প্রাপ্ত বই 

❝মায়াবনের রাজকন্যা❞। বইটি মূলত শিশুতোষ রুপকথার গল্পের বই। বইটিতে মোট ৭ টি গল্প আছে। 

🦢🦢প্রথম গল্প- আকাশপাখি ও রাজকন্যা নীলাম্বরী। 


🐎মেঘরাজ্যের রাজকন্যা নীলাম্বরী গল্পের মুল চরিত্র। রাজকন্যা নীলাম্বরী বড়ই দয়ালু। কিন্তু সে সারাদিন রাজপ্রাসাদে বন্দী থাকে। তার খুব শখ পৃথিবী দেখার। কিন্তু মেঘরাজ্যে প্রায়শ এক কালো দৈত্যের আক্রমণ হয় সেজন্য রাজকন্যার নিরাপত্তার জন্যই তাকে প্রাসাদে থাকতে হয়। একদিন আকাশরাজ্যের আকাশ পাখির সাথে তার দেখা হয়। তার সাহায্যে সে পৃথিবী, মেঘরাজ্য ও আকাশরাজ্য ঘুরে দেখে। পৃথিবীতে গিয়ে শিশুদের সাহায্য করে। এভাবে গল্পটি শেষ হয়। এ গল্পের মুল বিষয় পরোপকার যেটা শিশুদের উপযোগী করে সুন্দর করে পরিবেশন করেছেন লেখক। গল্পটা ছোট্ট কিন্তু গোছানো।

🦢🦢দ্বিতীয় গল্প-ইচ্ছেপরীর গল্প


🐎এখানে মূল চরিত্র ইচ্ছেপরী। ইচ্ছেপরী মানুষের ইচ্ছে পুরন করে আর ফুল ফোঁটায়। কিন্তু পরীরানীর ভয়ানক শাস্তির ভয়ে কেউ রাজ্যের বাইরে যেতে পারেনা। অথচ ইচ্ছেপরীর অনেক ইচ্ছে পৃথিবী দেখার। কিন্তু ভয়ে সেটা করা হয় না। একদিন পরীদের নাচের অনুষ্ঠানের সময় সুযোগ নিলো ইচ্ছেপরী। চুপ করে পৃথিবীতে আসলো। ফুল্লরা নামের একটি মেয়ের ইচ্ছেপুরন করে সে। বাগানের ফুল ফোঁটায় গান গেয়ে নেচে নেচে। তারপর ফুল্লরার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পরীরাজ্যে পৌছে প্রহরীর হাতে ধরা পরে। পরীরানী কঠিন শাস্তি হিসেবে রাজ্য থেকে চিরদিনের জন্য বের করে দেন। তারপর থেকে ইচ্ছেপরী পৃথিবীতে বাস করে আর শিশুদের ইচ্ছেপুরন করে। যেনো কল্পনায় শিশুদের একটুখানি ভরসার জায়গা। যদিও বাস্তব পৃথিবীতে সত্যিকার ইচ্ছেপরীর খুব দরকার কোমলমতি শিশুদের ইচ্ছে বা দুঃখ লাঘব এ। এটাই এ গল্পের শিক্ষা।


🦢🦢তৃতীয় গল্প-“জেলেকন্যা ও মৎস্যকুমার”


🐎এ গল্পের মুল চরিত্র জেলেকন্যা অ্যালিনা। যার বাবা একজন জেলে এবং সমুদ্রে জাহাজে করে মৎস শিকার করে। অ্যালিনা প্রতিদিন বাবার পথপানে চেয়ে থাকে। সে সমুদ্রের ধারে একটা গাছের গুঁড়িতে হেলান দিয়ে বসে থাকে। তারপর গান ধরে। তার মিষ্টি সুরেলা গান শুনে সামুদ্রিক পাখিরাও চলে আসে। একদিন অ্যালিনা খেয়াল করে কিছু একটা সমুদ্রের তলা থেকে উপরে ভেসে আসে। দেখতে কিছুটা মানুষ আবার পা পর্যন্ত মাছের মতো। অ্যালিনাকে দেখে ভয়ে ডুপ দেয়। আরেকদিনের কথা। জেলেকন্যা আবারও সুরেলা গলায় গান ধরে। তার গান শুনে সমুদ্র থেকে সেই অদ্ভুত প্রাণীটা সত্যিই তারকাছে চলে আসে। আসলে সে একটা জলমানব মানে মৎস্যকুমার। মৎস্যকুমার আর জেলেকন্যার বন্ধুত্ব হয়। তারপর সে তাকে তার মৎস্য রাজ্যে ঘুরিয়ে নিয়ে আসে এবং একটি মনিমুক্তার বাক্স উপহার দেয়। জেলেকন্যা তার বাবাকে সব বলে। কিন্তু জেলে ছিলো একটা লোভী। তাই সে সব হিরে জহরত একসাথে পাওয়ার লোভে মৎস্যকুমারকে জালে আটকানোর ফন্দি আঁটে। সে অন্যান্য জেলেদের সাথে পরামর্শ করে মৎসকুমারকে ধরতে গেলে মৎস্য কুমার সব বুঝতে পরে এবং জলের নিচে ডুব দিয়ে চলে যায়। আর কখনো ডাঙায় আসেনা। সেদিন থেকে জেলেকন্যা একা হয়ে যায়। 

🦢🦢 চতুর্থ গল্প “মায়াবনের রাজকন্যা” 

🐎 এ গল্পটি মুলত বইটির নামলিপি। মায়াবন নামে এক সুন্দর রাজ্য ছিলো। কিন্তু হঠাৎ সে রাজ্যে রাক্ষসীর আক্রমণ হয়। রাক্ষসীরা মায়াবনের রাজকুমার ও তার গোটা রাজ্যের লোকজনকে পাথর করে রাখে। শুধু পশুপাখি ও গাছপালা ছাড়া। গোটা মায়াবনে চলে রাক্ষসীদের তান্ডব ও অন্যায় রাজত্ব। পাশের দেশের রাজকন্যা লীলাবতী ঘুরতে আসে মায়াবনে। সে পশুপাখিদের কাছে জানতে পারে এটা শুধু বন নয় বরং একটা রাজ্য। তারা সব ঘটনা খুলে বলে রাজকন্যাকে। অবশেষে পশুপাখিদের সাহায্য নিয়ে রাজকন্যা রাক্ষসীদের প্রান নেয়ার জন্য তাদের এক কুৎসিত পাখি যার মধ্যে সব রাক্ষসীর প্রান রয়েছে সেটাকে খুঁজে বের করে। তারপর রাজকুমার হীরনকুমার কে খাঁচা থেকে মুক্ত করলে রাজকুমার সেই কুৎসিত পাখকে ধরে আকাশে উড়িয়ে দেয়। সাথে সাথে সব যাদু শক্তি নষ্ট হয়ে রাজ্য স্বাভাবিক হয় এবং রাক্ষসীরা বধ হয়। রাজা-রানি খুব খুশি হয়। তাীা রাজকন্যা লীলাবতীর সঙ্গে রাজপুত্র হীরনকুমারকে বিয়ে দেয়ার জন্য প্রস্তাব পাঠায় রাজকন্যা লীলাবতীর মা-বাবাকে। অবশেষে মহা ধুমধাম এ তাদের বিয়ে হয়। তারপর থেকে রাজকন্যা লীলাবতী মায়াবনে বাস করতে থাকে। 

🦢🦢 এর পর রয়েছে ৩ টি গল্প। এগুলো হলো

১/ রাক্ষসের বন 

২/রুনকি ও নীলপরি 

৩/ এক যে ছিলো রাজকন্যা 

এই বাকি তিনটি গল্পও আগের গল্পগুলোর মতই কাহিনি এবং চরিত্র দিয়ে পরিপূর্ণ । এগুলোতেও শিশুদের উপযোগী কল্পনারাজ্যকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন লেখক। যেহেতু এই তিনটি গল্প বাকি গল্পগুলোর মতই তাই এগুলো আর আলাদাভাবে আলোচনা করলাম না। 

পরিশেষে বইটির বহুল প্রচার কামনা করছি ও সংগ্রহে রাখতে অনুরোধ করছি । লেখকের জন্য শুভকামনা। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

Advertisement