বিজ্ঞাপন

দুঃস্বপ্নের ঘোর | খন্দকার নূর হোসাইন


 

উদ্দেশ্যহীনভাবে শহরের রাস্তায় হাঁটছি, আমি আর আমার বন্ধু। এই ভরদুপুরে কেন যেন রাস্তাটা নিরব নির্জন হয়ে আছে। কিন্তু কেন তা আমি জানিনা। জানার জন্য কোনো মাথা ব্যাথাও নেই আমার। হঠাৎ রাস্তার দুইপাশ থেকে কিছু ছেলে মেয়ে রাস্তায় নেমে এল। ঘিরে ধরলো আমাদের। তাদের হাতে একটা ব্যানার। কিসের ব্যানার তা আমি জানিনা৷ তাদের সাথে কোনো মিছিল বা শোভাযাত্রায় অংশ নিতে হবে। কিসের মিছিল তা জানার কোনো আগ্রহই নেই আমার। যেমন ভাবে ওরা এসেছিলো ঠিক তেমনিভাবে মিছিল শেষ হয়ে গেল। পথের মধ্যে উদয় হলো একটা পুলিশ ভ্যান। হঠাৎ নিজেকে আবিষ্কার করলাম, আমি একা দাড়িয়ে নির্জন একটা রাস্তায়। আমার সাথের বন্ধুটি নেই৷ কোথায় সে? আর সেই ছেলে মেয়েগুলো কোথায় হারিয়ে গেল এত তাড়াতাড়ি? এই প্রশ্নও আমাকে চিন্তিত করলোনা৷ সামনে থাকা পুলিশের গাড়িটার দিকে মনোযোগ দিলাম। পর পর পার হয়ে গেল দুটো গাড়ি। কিন্তু কি অদ্ভুত গাড়ি এগুলো । এমন গাড়ি আমি জীবনেও দেখিনি। ট্রাক আর বাসের আকৃতি মিলিয়ে বেশ উঁচু সাইজের অদ্ভুত এক গাড়ি। দেখলে কেন যেন গায়ে কাঁটা দেয়৷ গাড়ি দুটোর দিকে একদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মনে হল আমার বাড়ি ফেরা দরকার। কিন্তু একি? আমি একটা সম্পূর্ণ অপরিচিত ডাবল লেনের রাস্তায় দাড়িয়ে আছি। এর দুই পাশে কালো রঙের বহু পুরনো সব দালান৷ এই রাস্তা থেকে বের হতে চাইলাম আমি। অথচ, রাস্তার মাঝখানে আড়াআড়িভাবে রাখা একটা ট্রাক। এই ট্রাক আবার কোথা থেকে আসলো? কোনোকিছু চিনতে পারছিনা এখানকার। অচেনা অজানা কোনো শহরে চলে এসেছি আমি। রাস্তার দুইপাশে বাড়ি, তাই রাস্তা দিয়ে সোজা যাওয়া ছাড়া এ রাস্তা থেকে মুক্তি মিলবেনা৷ কিন্তু ট্রাকটা তো রাস্তার মাঝখানেই দাড়িয়ে আছে এখনো। ট্রাকের নিচ দিয়ে দেখা যাচ্ছে, ওপারে তিন রাস্তার মোড়৷ ট্রাক ও একটা বাড়ির দেয়ালের মাঝখানে হালকা একটু ফাঁকা স্পেস। স্পেস দিয়ে দক্ষিণের রাস্তাটা দেখা যাচ্ছে। একটা অস্পষ্ট অবয়বের লোককে দেখলাম ওদিকের রাস্তায়। আমার চোখের দৃষ্টি শক্তি কমে গেলো নাকি এখানকার মানুষগুলো এমন তা বুঝতে পারলাম না৷ দ্রুত রাস্তার সাথের একটা বাড়ির গেটের কাছে লুকিয়ে পড়লাম৷ আশা করছি লোকটা আমাকে দেখেননি। এখানকার সবকিছুই অদ্ভুত, তাই কাউকে বিশ্বাস করতে চাইনা আমি৷ যেভাবেই হোক পালাতে হবে এ শহর থেকে। এখনো সেই ট্রাকটা রাস্তায় দাড়িয়ে আছে। উপায় না দেখে রাস্তায় শুয়ে পড়লাম। বুকের উপর ভর দিয়ে গেরিলাদের মতো ট্রাকের নিচে চলে এলাম। হঠাৎ আমার বুকের খাঁচায় বাড়ি পড়লো। শহরটা অন্ধকার হতে শুরু করেছে। আশ্চর্য, একটু আগেও তো দিনের আলো ছিল। তবে কি ওটা শেষ বিকেলের আলো ছিল? না এমনটা হতেই পারেনা। আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে, দুপুরের টানা রোদ ছিল একটু আগে ৷ কয়েক মিনিটে কিভাবে অন্ধকার হবে? প্রশ্নগুলো নিজেকেই করলাম৷ আমি যে ট্রাকের নিচে শুয়ে আছি, তার দরজা খটাস শব্দে খুলে গেল৷ নেমে এল কালো বুট পরা এক জোড়া পা। লোকটা ট্রাকের আশেপাশে কিছু খুঁজতে  লাগল। সংকিত হয়ে উঠলাম, আমাকে খুঁজছে না তো? মনে হলো এই বুঝি ট্রাকের নিচে উঁকি দিল লোকটা। বুকের কাঁপুনি তখন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে আমার৷ কিন্তু না, লোকটা ট্রাকের নিচে উঁকি দিলোনা, চলে যেতে লাগল পশ্চিমের রাস্তার দিকে , আমি শুধু তার কালো জোতা জোড়া ও কালো প্যান্টটা দেখতে পেলাম। লোকটা চলে যাওয়ায় স্বস্তির একটা নিশ্বাস ফেললাম। দক্ষিণের রাস্তায় প্রথম দেখা সেই লোকটা এখনো আছে। না সেদিকে যাবনা আমি। দ্রুত ট্রাকের নিচে থেকে বেরিয়ে দৌড় দিলাম। কিছু দূর দৌড়ে আসার পর যখন বুঝলাম কেউ আমার পিছু নেয়নি, তখন দাড়িয়ে পড়লাম। দুই হাঁটুর উপর শরীরের ভর দিয়ে  হাফাতে লাগলাম। এবার খেয়াল করলাম, আমি আরো কোনো চিপা গলিতে ঢুকে পড়েছি। এই রাস্তার দুই পাশে স্কুলের মতো লম্বা ঘর। এগুলোও কালো রঙের ৷ আশেপাশে ময়লা আর্বজনা পড়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে অনেকদিন কোনো মানুষ এদিকে আসেনি৷ মনে হচ্ছে কোনো করিডোরে চলে এসেছি। আরো অন্ধকার হয়ে আসছে চারপাশটা। ততক্ষণে  ভয়ঙ্কর সব শব্দ আমার কানে আসতে লাগল। আমি খুব একা এখানে, অজানা কোনো ভূতুড়ে শহরে চলে এসেছি আমি । কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে এটা কিভাবে হলো তা আমি এখনো বুঝতে পারছিনা। এ কেমন সময়ের জালে ফেঁসে গেলাম আমি? আমার বন্ধুটি কোথায় গেল, আমাকে ছেড়ে? এই দুঃসহনীয় পরিবেশে আমি একা। আমি এখানে আর এক মুহূর্তও থাকতে চাইনা। তাকিয়ে দেখি সামনে আর কোনো  রাস্তা নেই। কোথায় যাবো আমি? আমি এটাকে দুঃস্বপ্ন ভাবতে চাইলাম। মুক্তি  পেতে চাইলাম এই স্বপ্ন  থেকে। জোরে একটা চিৎকার দিলাম। ঠিক তখনি নিজেকে চিরচেনা  বেডে আবিষ্কার করলাম। কিন্তু এখানেও বিপদ কমলোনা। আমি দেখলাম আমার বেডে কম্বলের উপর ফুট  তিনেক লম্বা, সাদা রঙের  উপর কালো ফোঁটা  দেয়া একটা সাপ শুয়ে আছে। আমার দিকেই তাকিয়ে  আছে ওটা। আমি নড়তে পারছিনা। শরীরের পেশিগুলো যেন অবশ হয়ে গেছে। তবে কি সাপটা আমাকে কামড় দিয়েছে? আরো ভয় পেয় গেলাম আমি। শরীরের  সমস্ত শক্তি  দিয়ে উঠার চেষ্টা করলাম। হ্যাঁ, এবার উঠে বসলাম আমি। তারপর খাট থেকে নেমে সোজা দরজার দিকে দৌড় দিলাম । পরে এসে দেখি বিছানায় কোনো সাপ নেই। মজার ব্যাপার হলো, যখন আমার ঘুম ভেঙেছে ঠিক তখনি দৌড় দিতে পেরেছি। তবে কি এর আগে স্বপ্নেও ঘুম ভেঙে ছিলো? দুঃস্বপ্ন  থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর  শুকরিয়া আদায় করলাম। (সমাপ্ত) 









Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

Advertisement