বিজ্ঞাপন

শিক্ষকের মর্যাদা | মুহাম্মদ বরকত আলী

 

কবিতা থেকে গল্পঃ


দিল্লীর এক প্রভাবশালী বাদশার কথা শোনাব আজ। বাদশার উত্তরাধীকারি হিসেবে একমাত্র শাহাজাদা ছিল। শাহাজাদারা রাজ্য পরিচালনার জন্য যুদ্ধবিদ্যাসহ অন্যান্য শাস্ত্রেও শিক্ষা নেয়। কিন্তু যুদ্ধবিদ্যা শিক্ষা নেওয়ার জন্য উপযুক্ত বয়স আর শারীরিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে। শাহাজাদাকে আদব কায়দা শেখানোর জন্য খুব অল্প বয়সে, মানে তোমাদের এখন যত বয়স, ঠিক সেই বয়সে দিল্লীর একটা মক্তবে মৌলভীর কাছে পাঠানো হল। দিন যায়, মাস যায় শাহাজাদা মক্তবের মৌলভীর কাছে আদব কায়দা শিখতে থাকে। বাদশা সিদ্ধান্ত নিলেন নিজের চোখে দেখে আসবে শাহাজাদা ঠিকঠাক শিক্ষা নিচ্ছে কিনা। যেই বলা সেই কাজ। পরের দিন সকালবেলা বাদশা ছদ্মবেশে হাজির হলেন মক্তবে।

মক্তবে প্রবেশ করতেই দেখতে পেলেন, মৌলভী বসে বসে অজু করছে, শাহাজাদা তার মৌলভীর পায়ে পানি ঢালছেন। মৌলভী নিজ হাতে পায়ের আঙ্গুল পরিস্কার করছেন। এতক্ষণ পর মৌলভী দেখতে পেলেন বাদশা স্বয়ং এসেছেন মক্তবে। মৌলভী উঠে দাঁড়িয়ে কুর্নিশ করতেই, বাদশা কথা না বলেই প্রবেশ দ¦ার থেকেই ফিরে গেলেন রাজদরবারে। মৌলভী সাহেব বিচলিত হয়ে পড়লেন। কি জানি কি হয়!
পরের দিন সকালে রাজ দরবারে ডাক পড়লো মৌলভী সাহেবের। মৌলভী সাহেব ভয়ে কিছুটা দুমড়ে গেলেন। দিল্লীর অধিপতি বাদশা আলমগীরের একমাত্র শাহাজাদাকে পাঠিয়েছেন শিক্ষা লাভের জন্য, আর আমি তাকে দিয়ে অযুর পানি আনিয়েছি। শুধু কি তাই! শাহাজাদাকে দিয়ে আমার পায়ে পানি ঢেলে নিয়েছি। হয়তো আজ আমার গর্দান যাবে।
কিছুক্ষণ পর আবার বুক ফুলিয়ে মৃদু হেসে মনে মনে বললেন, শিক্ষক আমি, দিল্লীর অধিপতি বাদশা সে কোথাকার। যায় যাবে গর্দান, তবুও আমি চাইবো না প্রাণ ভিক্ষা।

রাজ দরবারে বাদশা সিংহাসনে বসে আছেন। মন্ত্রিবর্গ, অন্যান্য সভাসদেরাও নিজ নিজ আসনে বসে আছেন।
মৌলভী সাহেব দরবারে হাজির হলেন। সকলেই চুপচাপ। বাদশা বললেন, মৌলভী সাহেব, আপনি আমার ছেলেকে একটুও আদব কায়দা শেখাননি? সেতো শিখেছে বেয়াদবি।

গতকাল শাহাজাদা আপনার পায়ে অযুর পানি ঢালছে, আর আপনি নিজ হাতে আপনার পায়ের আঙ্গুল পরিস্কার করছেন, এটা কি বেয়াদবি না? আমি খুব খুশি হতাম যাদি দেখতাম যে, শাহাজাদা আপনার পায়ে পানি ঢালছে আর তার নিজ হাত দিয়ে আপনার পা ধুয়ে দিচ্ছে।এ কথা শুনে সভাসদ সকলেই বাদশার জয় ধ্বনি দিতে লাগলেন। মৌলভী সাহেব বুক ফুলিয়ে বাদশাকে কুর্নিশ করলেন আর বললেন, সত্যিই আপনি মহান উদার বাদশা আলমগীর। সেই থেকে শিক্ষকের মর্যাদা আরও বেড়ে গেল। সকলেই শিক্ষকদের সম্মান করে। তোমরাও শিক্ষকদের কথা মত চলবে আর তাদেরকে শ্রদ্ধা করবে।

( কাজী কাদের নেওয়াজ‘র ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ কবিতা অবলম্বনে।)
মেহেরপুর, সদর

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

Advertisement